প্রাথমিক শিক্ষকদের আত্মমর্যাদা এবং মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা
নিজেদের মর্যাদা বৃদ্ধির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা। সর্বশেষ বুধবার তারা রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ ডেকেছিলেন। তবে পুলিশি বাধায় শেষ পর্যন্ত তারা সমাবেশ করতে পারেননি। অনেক শিক্ষক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীল হাতে নাজেহাল হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষকদের এই আন্দোলন নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন সুবর্ণচর উপজেলার সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার জনাব আজিজুর রহমান। তার স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবুল তুলে ধরা হলো।
প্রাথমিক শিক্ষকদের আত্মমর্যাদা এবং মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা
বিগত কয়েকদিন যাবত প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন গ্রেড আপগ্রেডের দাবিতে প্রথমত সংবাদ সম্মেলন, কর্মবিরতি এবং অবশেষে আজকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করতে চাওয়া ও পুলিশি বাধার মুখে শেষ পর্যন্ত দোয়েল চত্ত্বরে সমবেত হওয়া এবং পুলিশের লাঠিচার্জ সম্ভবত আমাদের জাতীয় দৈন্যতার চুড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ।
প্রথমত বলে রাখি, শিক্ষকদের বেতন ভাতা কিংবা গ্রেড নির্ধারণের এখতিয়ার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কিংবা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নেই। এই মন্ত্রনালয় কিংবা অধিদপ্তরের কাজ হলো মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা। স্বভাবতই মানসম্মত শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হয় এমন যেকোন কর্মকান্ড প্রতিরোধ করতে এই মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তাগণ সচেষ্ট থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রশ্ন হলো স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরেও যাঁরা মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করবেন সেই শিক্ষকদের কে আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠা কিংবা উপযুক্ত বেতন ভাতার জন্য রাস্তায় নামতে হবে কেন? শিক্ষকদের বর্তমান বেতন গ্রেড কি যথাযথ? তাঁদের দাবি কি অযৌক্তিক? নাকি রাষ্ট্রের সামর্থ্য নেই এসব দাবি পূরণের?
শেষ প্রশ্নের উত্তরটাই আগে খুঁজি। প্রথমত স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরেও যদি প্রচুর সম্ভাবনাময় একটা রাষ্ট্র গরিব থাকে তাহলে এর দায়ভার শিক্ষকদের নয়, দায়ভার যারা এই ৪৮বছরে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন তাদের। আসলেই কি রাষ্ট্র গরিব? হাজার হাজার কোটি টাকার বড়বড় মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন, সাড়ে পাঁচ লক্ষ কোটি টাকার বাজেট, অন্যদিকে বিদেশে কয়েক লক্ষ কোটি টাকা পাচারের খবর পাওয়া যায় কিন্তু শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়না টাকার অভাবে! যাঁরা জাতীর মেরুদন্ড গড়ার দায়িত্বে আছেন তাঁদের শরীরের মেরুদন্ড ভেঙ্গে পড়ছে আর্থিক দৈন্যতায়। একটু ভাবুন, মানসম্মত শিক্ষার প্রথম শর্ত মানসম্মত শিক্ষক। কিন্তু আমাকে বলুন, মেধাবীরা কেন আসবে এই পেশায়? কি দিচ্ছেন তাদের? মোটা স্যালারী? প্রমোশনের সুযোগ? স্মার্ট লাইফ স্টাইল? সামাজিক মর্যাদা? কোন ধরনের ক্ষমতা? কোনটাই না! কিছুই না! নীতি আদর্শের কথা বলবেন তো, ওটা বহু আগেই এই দেশ থেকে নির্বাসনে গেছে। এখন হাঁটুর বয়সী অশিক্ষিত পাতি নেতারাও শিক্ষকদের জ্ঞান দিতে আসে। তুচ্ছ কারণে প্রাথমিক শিক্ষকদের অপমান করতে দ্বিধা করেনা ঠিকমতো লুঙ্গি পরতে না জানা লোকটিও! ওদেরকে ডাকে 'মাস্টার' বলে। সরকারি বেসরকারি কোন ফোরামে প্রাথমিক শিক্ষকদেরকে ডাকা হয়না একান্ত বাধ্য না হলে। অথচ ভোটার করা, ভোট নেয়া, যেকোন জরিপ করা, জাতীয় দিবস হতে শুরু করে জলাতঙ্ক দিবস পালন এহেন কোন কাজ নেই যা প্রাথমিক শিক্ষকদেরকে দিয়ে করানো হয়না। যখন বলা হয় শিক্ষকতা একটি মহান পেশা, তখন মনে প্রশ্ন জাগে 'মহান' শব্দটার সংজ্ঞাটা আসলে এদেশে কি? এখানে চিবিয়ে রস বের করা হবে কোন বিনিময় ছাড়া, মুখে বলবে তোমার কাজটা মহান, কিন্তু যখন মহানের মতো সুবিধা দাবি করবে তখন কপালে জুটবে লাঞ্চনা আর অপমান!
সবাই যখন বলে অন্য যেকোন পেশার সাথে এ পেশার তুলনা হয়না কারণ এটি একটি মহান পেশা, তাহলে সুযোগ সুবিধার বেলায় অন্য পেশার সাথে কেন তুলনা করা হবে? যদি মানসম্মত শিক্ষাই চাওয়া হয় তবে কেন মানসম্মত বেতন কাঠামো (প্রয়োজনে স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো) এই ডিপার্টমেন্টে নিশ্চিত করা হবেনা? কেন স্বাধীনতার এতো বছরেও এই ডিপার্টমেন্টে একটি পুর্ণাঙ্গ নিয়োগ বিধি করা গেলনা?
আমরা উন্নত বাংলাদেশ আশা করি, কাদের কে দিয়ে? কে গড়বে উন্নত বাংলাদেশ? উন্নতমানের নাগরিক দিয়ে? সেই উন্নতমানের নাগরিকের ভিত্তি রচনা করবে কে? তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারিভূক্ত প্রাথমিক শিক্ষক?
প্রাথমিক শিক্ষকদের আত্মমর্যাদা এবং মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা
বিগত কয়েকদিন যাবত প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন গ্রেড আপগ্রেডের দাবিতে প্রথমত সংবাদ সম্মেলন, কর্মবিরতি এবং অবশেষে আজকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করতে চাওয়া ও পুলিশি বাধার মুখে শেষ পর্যন্ত দোয়েল চত্ত্বরে সমবেত হওয়া এবং পুলিশের লাঠিচার্জ সম্ভবত আমাদের জাতীয় দৈন্যতার চুড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ।
প্রথমত বলে রাখি, শিক্ষকদের বেতন ভাতা কিংবা গ্রেড নির্ধারণের এখতিয়ার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কিংবা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নেই। এই মন্ত্রনালয় কিংবা অধিদপ্তরের কাজ হলো মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা। স্বভাবতই মানসম্মত শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হয় এমন যেকোন কর্মকান্ড প্রতিরোধ করতে এই মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তাগণ সচেষ্ট থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রশ্ন হলো স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরেও যাঁরা মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করবেন সেই শিক্ষকদের কে আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠা কিংবা উপযুক্ত বেতন ভাতার জন্য রাস্তায় নামতে হবে কেন? শিক্ষকদের বর্তমান বেতন গ্রেড কি যথাযথ? তাঁদের দাবি কি অযৌক্তিক? নাকি রাষ্ট্রের সামর্থ্য নেই এসব দাবি পূরণের?
শেষ প্রশ্নের উত্তরটাই আগে খুঁজি। প্রথমত স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরেও যদি প্রচুর সম্ভাবনাময় একটা রাষ্ট্র গরিব থাকে তাহলে এর দায়ভার শিক্ষকদের নয়, দায়ভার যারা এই ৪৮বছরে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন তাদের। আসলেই কি রাষ্ট্র গরিব? হাজার হাজার কোটি টাকার বড়বড় মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন, সাড়ে পাঁচ লক্ষ কোটি টাকার বাজেট, অন্যদিকে বিদেশে কয়েক লক্ষ কোটি টাকা পাচারের খবর পাওয়া যায় কিন্তু শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়না টাকার অভাবে! যাঁরা জাতীর মেরুদন্ড গড়ার দায়িত্বে আছেন তাঁদের শরীরের মেরুদন্ড ভেঙ্গে পড়ছে আর্থিক দৈন্যতায়। একটু ভাবুন, মানসম্মত শিক্ষার প্রথম শর্ত মানসম্মত শিক্ষক। কিন্তু আমাকে বলুন, মেধাবীরা কেন আসবে এই পেশায়? কি দিচ্ছেন তাদের? মোটা স্যালারী? প্রমোশনের সুযোগ? স্মার্ট লাইফ স্টাইল? সামাজিক মর্যাদা? কোন ধরনের ক্ষমতা? কোনটাই না! কিছুই না! নীতি আদর্শের কথা বলবেন তো, ওটা বহু আগেই এই দেশ থেকে নির্বাসনে গেছে। এখন হাঁটুর বয়সী অশিক্ষিত পাতি নেতারাও শিক্ষকদের জ্ঞান দিতে আসে। তুচ্ছ কারণে প্রাথমিক শিক্ষকদের অপমান করতে দ্বিধা করেনা ঠিকমতো লুঙ্গি পরতে না জানা লোকটিও! ওদেরকে ডাকে 'মাস্টার' বলে। সরকারি বেসরকারি কোন ফোরামে প্রাথমিক শিক্ষকদেরকে ডাকা হয়না একান্ত বাধ্য না হলে। অথচ ভোটার করা, ভোট নেয়া, যেকোন জরিপ করা, জাতীয় দিবস হতে শুরু করে জলাতঙ্ক দিবস পালন এহেন কোন কাজ নেই যা প্রাথমিক শিক্ষকদেরকে দিয়ে করানো হয়না। যখন বলা হয় শিক্ষকতা একটি মহান পেশা, তখন মনে প্রশ্ন জাগে 'মহান' শব্দটার সংজ্ঞাটা আসলে এদেশে কি? এখানে চিবিয়ে রস বের করা হবে কোন বিনিময় ছাড়া, মুখে বলবে তোমার কাজটা মহান, কিন্তু যখন মহানের মতো সুবিধা দাবি করবে তখন কপালে জুটবে লাঞ্চনা আর অপমান!
সবাই যখন বলে অন্য যেকোন পেশার সাথে এ পেশার তুলনা হয়না কারণ এটি একটি মহান পেশা, তাহলে সুযোগ সুবিধার বেলায় অন্য পেশার সাথে কেন তুলনা করা হবে? যদি মানসম্মত শিক্ষাই চাওয়া হয় তবে কেন মানসম্মত বেতন কাঠামো (প্রয়োজনে স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো) এই ডিপার্টমেন্টে নিশ্চিত করা হবেনা? কেন স্বাধীনতার এতো বছরেও এই ডিপার্টমেন্টে একটি পুর্ণাঙ্গ নিয়োগ বিধি করা গেলনা?
আমরা উন্নত বাংলাদেশ আশা করি, কাদের কে দিয়ে? কে গড়বে উন্নত বাংলাদেশ? উন্নতমানের নাগরিক দিয়ে? সেই উন্নতমানের নাগরিকের ভিত্তি রচনা করবে কে? তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারিভূক্ত প্রাথমিক শিক্ষক?
Comments
Post a Comment