মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছিঃ

আমি (আমরা প্রাথমিকমাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছিঃ শিক্ষক) ১৫তম গ্রেডের (তৃতীয় শ্রেণির) একজন (আমরা) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। শিক্ষক হলেন মানুষ গড়ার কারিগর। সেই হিসেবে আমাকেও (প্রাথমিক শিক্ষক) মানুষ গড়ার কারিগর বলা হয়। বিশেষ করে আমি একটুখানি সম্মান আর মানুষের ভালোবাসা পাওয়ার আশায় শিক্ষকতা পেশা বেছে নেওয়ার কারণ। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষকতা পেশা বেছে নেওয়া কী পাপ? বুঝে আসছে না। তবু লিখতে যাচ্ছি দু'একটা কথা! এর আগে আমি শ্রদ্ধা ভরে শুরু স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যিনি না থাকলে হয়তো বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হতো কিনা জানি না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭৩ সালে দেশের ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে প্রথম জাতীয়করণ করে সকল প্রাথমিক (প্রায় দেড় লক্ষ) শিক্ষককে সরকারি করেছিলেন। তিনি না থাকলে হয়তো আমরা প্রাথমিক শিক্ষকরা আজো অবহেলিত থাকতাম। ২০১৪ সালে আপনি (মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) দেশের ২৬ হাজারের বেশি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণের ঘোষণা দিয়ে প্রমাণ করেছেন আপনি প্রাথমিক শিক্ষকদের নিবেদিত প্রাণ।
এজন্য আপনাকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আপনি ও আপনার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য যা করেছেন তা আমরা কখনো ভুলব না। কিন্তু হে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি জানেন কি না জানি না। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, টাইমস্কেল জটিলত, গ্রেড বৈষম্য ও মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতার দরুণ আমরা প্রাথমিক শিক্ষকরা দীর্ঘ দিন ধরে বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছি। দীর্ঘ ছয় বছর ধরে প্রাথমিক শিক্ষকরা যে আন্দোলন করে আসছেন সেটা আদৌ বেতন বৃদ্ধির আন্দোলন না। বেতন বৃদ্ধির আন্দোলন ভেবে অনেকে আমাদের সমালোচনাও করছেন। আর করবেন নাই-বা কেন? টেলিভিশন চ্যানেলে টকশোতে যখন সচিব থেকে শুরু করে মন্ত্রী মহোদয় পর্যন্ত  বলেন প্রাথমিক শিক্ষকরা ৩৬ হাজার টাকা বেতন পায়। তখন আমরা না পারি হাসতে আর না পারি কাঁদতে। পেটের ক্ষুধা নিয়ে  নীরবে বসে থাকি। কেননা আমরা মানুষ গড়ার কারিগর, এই ভেবে। আমরা প্রাথমিক শিক্ষক বলে আমাদের ক্ষুধা নাই? আমাদের জন্য কী দ্রব্য মূল্যের আলাদা নির্দেশনা আছে? নাকি প্রাথমিক শিক্ষক ভেবে সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার অধিকার নেই? আমরা দাবি জানাচ্ছি বেতন বৈষম্য দূর করার জন্য, আর কর্তৃপক্ষ বলছে বেতন বৃদ্ধি করা যাবে না। প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলন তাদের সামান্যতম সম্মান প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। আমাদের কী সেই অধিকারও নেই? আন্দোলন করলে পরিপত্রের মাধ্যমে হুমকি দেওয়া হয়। বন্ধের দিনেও কর্মস্থল ত্যাগ না করার পরিপত্র জারি করা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের নির্বাচনী ইশতেহার ও ভয়েস কলে আপনি ও আপনার দল আমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিরসন করা হবে। কিন্তু তার প্রতিফলন কবে হবে বা আদৌ হবে বলে বুঝতে পারছি না। কিছুদিন আগে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধান শিক্ষকদের ১০ম ও সহকারী শিক্ষকদের ১২তম গ্রেডের প্রস্তাব অর্থমন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করলেন। যদিও ১২তম গ্রেড সহকারী শিক্ষকদের মনপ্রোত ছিল না। অর্থ মন্ত্রণালয় বেতন গ্রেড যথাযথ আছে বলে ফিরিয়ে দিল। এখন আবার বলা হচ্ছে প্রধান শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড, সহকারী প্রধান শিক্ষকদের ১২তম আর সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেড দেওয়া হবে বলে গুঞ্জন রয়েছে। তাই যদি হয়, তবে প্রাথমিক শিক্ষকদের কী দাবি পূরণ হলো? অথবা আপনার ভয়েসকল বা আপনাদের রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহার-বা বাস্তবায়িত করলেন? আমাদের দাবি মানতে হবে না, আপনার দেওয়া ভয়েসকল ও নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়িত করুন। বেতন বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের কর্মসূচি অনুযায়ী আমরা নিজ নিজ বিদ্যালয়ে চারদিন কর্ম বিরতি পালন করি। সেখানে আমাদের বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়। দাবি আদায়ের সর্বশেষ মহাসমাবেশ পূর্বপ্রস্তুতি অনুযায়ী ঢাকা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে হওয়ার কথা থাকলে পুলিশি বাঁধায় দোয়েল চত্বরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজার হাজার শিক্ষকদের জনসমুদ্রে রূপান্তরিত হয়। আমি আমার জীবনে কখনো সামান্যতম গ্রেড আর সম্মান বাড়ানোর জন্য এতো শিক্ষককে জড়ো হতে আর কখনো দেখি নি। প্রায় ১৫ জনের বেশি শিক্ষককে পুলিশের হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি প্রায়ই বলেন, আপনি দেশের সব খবর রাখেন। সেটা আমরাও বিশ্বাস করি। দেশের কোথাও কোনো আন্দোলন বা অস্থিতিশীল কিছু হলে আপনি এসে সান্ত্বনা বা আশ্বাস দেন। সকলের যৌক্তিক দাবিগুলোও মেনে নেন। কিন্তু ২৩ অক্টোবর ২০১৯ প্রাথমিক শিক্ষকদের মহাসমাবেশে পুলিশের হামলায় ১৫ জনের অধিক শিক্ষক আহত হলো। শিক্ষকদের গায়ে হাত উঠে, পত্র পত্রিকায় শিক্ষকদের আন্দোলনের ছবি প্রকাশিত হয়। নিশ্চয়ই সেগুলো সম্পর্কে আপনি অবগত আছেন। আমরা আশাকরি, আপনি আমাদের হতাশ করবেন না। আমাদের আন্দোলন আপনার সরকারের বিরুদ্ধে না। আমরা প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের মধ্যকার গ্রেড বৈষম্য নিরসন চাই। আমরাও আপনার সরকারের মিশন বাস্তবায়ন করতে চাই। তাই প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি ও মানুষ গড়ার কারিগরদের একটুখানি সম্মান দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের মিশন বাস্তবায়নে ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করুন। আপনি একজন সফল প্রধানমন্ত্রী, একজন মহিয়সী নারী, একজন স্নেহময়ী মা জননেত্রী শেখ হাসিনা। আপনার হস্তক্ষেপ ব্যতিত প্রাথমিক শিক্ষকরা কখনো তাদের ন্যায্য অধিকার আর সম্মান ফিরে পাবে না ।

Comments

Popular posts from this blog

সুখবর হচ্ছে বাংলাদেশই তৈরি হচ্ছে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক অ্যাভিগান

অধ্যায় - ৫ রাসায়নিক বন্ধন