প্রতিবাদ সমাবেশ
প্রথম আলোর দূর পরবাসে এত দিন আমি প্রবাসী বাঙালিদের বিভিন্ন আনন্দ আয়োজন, উৎসব ও খুশির খবরগুলো খুব আনন্দের সঙ্গে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আজ কিছুটা মন ভারাক্রান্ত। কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত ও অসহায়ের মতো কলম ধরেছি। কি লিখব—মৃত্যু, কান্না, কষ্ট, লাশের গন্ধ, নাফ নদীতে লাশের বিচ্ছিন্ন মিছিল, হাহাকার, অসহায়ত্ব, কী বলব।
এ লেখা যখন লিখছি তখন পর্যন্ত প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, রাখাইনে ৪৭১টি গ্রামের মধ্যে ২১১টি গ্রাম জনশূন্য হয়ে পড়েছে। ১৭ দিনে ১১২টি নারী ও শিশুর লাশ উদ্ধার হয়েছে। নাফ নদীতে নৌকাডুবি হয়েছে ২২টি। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এবং ওআইসি ছাড়াও বিভিন্ন দেশসহ আন্তর্জাতিক মিডিয়া সিএনএন ও বিবিসি এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর অমানবিক নারকীয় ও বীভৎস হত্যাযজ্ঞের অকাট্য প্রমাণসহ জাতিগত নিধনের অভিযোগ এনেছে। সহিংসতা বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে আসছে। কিন্তু বরাবরের মতো অং সান সু চি অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তার দেশের সামরিক কর্মকর্তারা নাকি সন্ত্রাস বন্ধের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এই যদি হয় সন্ত্রাসী নির্মূলের কার্যক্রম তাহলে পুরো বিশ্ব কেন ক্ষোভ ঝাড়ছে?
প্রতিবাদ সমাবেশের দৃশ্য
আর বৌদ্ধ ধর্মের অহিংস বাণী তো এই হত্যাযজ্ঞকে সমর্থন করে না। ‘জীব হত্যা মহাপাপ’ আর এই জীব হত্যাকেই মিয়ানমার সরকার সহজ স্বাভাবিক, নির্বিকারভাবে চালিয়ে আসছে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর পৈশাচিক নারকীয় হত্যাযজ্ঞকে পুরো বিশ্ব যেভাবে ধিক্কার জানিয়ে যাচ্ছে তার সঙ্গে পুরো ইউরোপীয় বাংলাদেশি কমিউনিটি, অ্যাসোসিয়েশন ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা দল মত ধর্ম নির্বিশেষে একাত্মতা ঘোষণা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকেল ৫টায় জেনেভার জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে ভঙ্গুর চেয়ারের পাদদেশে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন শহর থেকে আগত বাংলাদেশিরা এবং ইউরোপের অন্যান্য সংগঠনগুলো একসঙ্গে হয়ে এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
সকল প্রবাসীদের সম্পূর্ণ রাজনৈতিক মুক্ত জোরালো প্রতিবাদ এবং মানবতার পক্ষের স্লোগান ও বিক্ষোভে জেনেভার জাতিসংঘের সদর দপ্তরের পরিবেশ কিছুটা হলে ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছিল। এই প্রতিবাদ সভায় প্রত্যেক বক্তাই তাদের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন এবং সু চির নোবেল প্রত্যাহারের দাবি জানান। সকল বক্তার বক্তব্যে সামরিক বাহিনীর অমানবিক হত্যাসহ তাদের নারকীয় পৈশাচিকতার চিত্র ফুটে ওঠে।
প্রতিবাদ সমাবেশের দৃশ্য
প্রতিবাদ সভায় জেনেভা থেকে ছিলেন চৌধুরী আমজাদ, খলিলুর রহমান, শ্যামল খান, নজরুল জমাদার, নিজামউদ্দিন, মাসুম খান, মশিউর রহমান সুমন, সেলিম খান, মোজাম্মেল হক জুয়েল, শাহাদৎ হোসেন, মাহবুবুর রহমান, কুদরত এলাহী টুকু, মো. আনোয়ারুল ইসলাম, অরুণ বড়ুয়া, সুমন বড়ুয়া, টিপু, বাপ্পী, মোল্লা নজরুল, ইতি, মুক্তি, কান্তা, নুপুর, নিশাত, শামীম, রুকু, মিলি, লিলি, সাশা, নীতু ও তান প্রমুখ।
জুরিখ থেকে যোগ দেন জিকো বাদল, হারুন ব্যাপারী, খান শরিফ, শেখ আনোয়ার, গোলাম মাওলা, হাবিবুর রহমান, স্বপন রায়, শিবির ভূঞা, জাহানারা বাশার, কাজি আসাদুজ্জামান, আমীরুল ইসলাম, গোলাম মোর্শেদ সাচ্চু ও হুমায়ূন কবির প্রমুখ।
লুজান থেকে যোগ দেন গোলাম মোস্তফা, আবুল হোসেন মণির, আলী হোসেন ও মনিরুজ্জামান শেখ।
প্রতিবাদ সমাবেশের দৃশ্য
সোলোর্থন থেকে যোগ দেন মশিউর রহমান ও নজরুল ইসলাম প্রমখ।
তাদের সবার অক্লান্ত পরিশ্রম, ইচ্ছা ও আগ্রহে প্রতিবাদ সভাটি অত্যন্ত সুচারুভাবে সুসম্পন্ন হয়েছে।
এ ছাড়া প্রতিবাদ সভায় যোগ দেন সর্ব ইউরোপীয় বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশনের অর্থাৎ এইবিএ-এর সহসভাপতি সেলিম ফকরুদ্দিন, সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ ইনু, প্রকৌশলী জামাল ও প্যারিস থেকে মমতাজ আলো। এইবিএ-এর সদস্যদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি প্রতিবাদ সভাটি আলাদা মাত্রা যোগ করে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, ২৫ আগস্টের পর থেকে রাখাইন মুসলিম অধ্যুষিত প্রদেশটির উত্তরাঞ্চলে কমপক্ষে ৮০টির মতো বড় ধরনের ইচ্ছাকৃত অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। যা গত চার বছরেও এত প্রকটভাবে ঘটেনি। সামরিক কৌশলগত এই হত্যাযজ্ঞের নাম স্কর্চড আর্থ অর্থাৎ ফাঁকা গুলি ছুড়ে অসহায় নিরস্ত্র মানুষগুলোকে ভয় দেখিয়ে ঘিরে ফেলা এবং পালানোর সময় সরাসরি গুলি ছুড়ে মেরে ফেলা ও সবকিছু আগুনে পুড়িয়ে জ্বালিয়ে ফেলা। যাতে করে বোঝার উপায় থাকে না যে সেখানে কোনো মনুষ্য জনপদ ছিল।
আসুন, ধর্ম রাজনীতি ভিন্ন মতভেদ থেকে দূরে গিয়ে নিজেদের সুস্থ বিবেক বোধের পরিচয় দিই। শুদ্ধ, ন্যায় মানবতার পক্ষে সবার অবস্থান আরও সুদৃঢ় করি। আমরা আমাদের দেশের পাশে দাঁড়াই। বাংলাদেশ যেন বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দেখিয়ে দিতে পারে—আমরাও পারি ও পারব। একবিংশ শতাব্দীতে এসে বিশ্বের কোনো সুস্থ স্বাভাবিক দেশ এই জাতিভেদ প্রথা, পুশ-ইন, হত্যাকাণ্ড সমর্থন করে না। প্রত্যেকটা বাঙালি জাতি ও মানবতা জয়গানের পক্ষে তাদের আপসহীন ভূমিকা পালন কর
Comments
Post a Comment