নাগরিকত্ব বাতিল করে কানাডায় সুচির যাবজ্জীবন


মানবতা অপরাধে জড়িত থাকা এবং গণহত্যায় সমর্থনের দায়ে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচিকে দেয়া কানাডার সম্মানসূচক নাগরিকত্ব বাতিল করে যাবজ্জীবন দিচ্ছে কানাডার আদালত।

ব্রিটেনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজের এক সাংবাদিকের বর্ণনায় ফুটে উঠেছে রাখাইনে রোহিঙ্গা নির্যাতনের ভয়াবহতা। স্কাই নিউজের রিপোর্টার আশিষ জোশি এক রিপোর্টে সেই অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন।

দুই সহকর্মীকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে কাজ করছিলেন। একদিন মিয়ানমার সংলগ্ন বাংলাদেশ সীমান্তে ছোট্ট একটি মুদি দোকানের সামনে দেখতে পান ধোঁয়ার কুণ্ডলী। আশিষ লিখেছেন, ‘আমি শুনেছিলাম মিয়ানমারের সেনাবাহিনী জ্বালাও পোড়াও অব্যাহত রেখেছে কিন্তু দিনের বেলা এবং এতটা প্রকাশ্যে ওরা এমনটা করছে তা ধারণা করিনি। আমি ভেবেছিলাম আন্তর্জাতিক ক্ষোভ আর নিন্দা এড়াতে হয়তো তারা রাতের অন্ধকারে এমন দমন-পীড়নমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।’

মোহাম্মদ সায়েম নামের এক প্রত্যক্ষদর্শীকে উদ্ধৃত করে আশিষ জানান, যে গ্রামটি জ্বলছিল সেখানে প্রায় ছয় হাজার মানুষের বসবাস। সায়েমের দাবি, দুই-তিন আগে ওই আগুন জ্বলা শুরু হয়। তিনি নিজের চোখে দেখেছেন। মোবাইলে তোলা বেশ কয়েকটি ছবিও দেখান এই সহিংসতার।

আশিষ জানান, একটু পর তারা দেখতে পেয়েছেন এক দল মানুষ সারিবদ্ধ হয়ে আসছে। তারা ওই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাথে আলাপ করতে শুরু করলেন।
আশিষ বলেন, প্রথমেই আমরা কথা বললাম, নুর খালিম নামের এক নারীর সাথে। নুর খালিম নামের ওই নারী তার পা দেখালেন। সেগুলো গোলাপি রঙের হয়ে আছে, চামড়া যেন খুলে আসছে। ক্ষত থেকে তখনো রক্ত বের হচ্ছে। তার বাড়িতে আগুন দেয়ার পর এমনই পরিণতি হয়েছে। আর সেই জ্বলন্ত পা নিয়েই কয়েকদিন ধরে হাঁটার পর বাংলাদেশে পৌঁছেছেন।

ছয়-সাত বছরের এক মেয়ের কোলে মুজাহিদ নামের পাঁচ দিন বয়সী এক শিশু। দেখলেই বোঝা যায় এ নবজাতক অসুস্থ। পেছনে তাকিয়ে দেখলাম মুজাহিদের মা রাবিয়াকে। সন্তানের মতো তার অবস্থাটাও করুণ। সন্তান দেয়ার পর পাঁচ দিন হেঁটে এখানে এসেছেন। আরেক রোহিঙ্গা নারী ফাতিমা জানান, আমরা সাতজন একসাথেই ছিলাম। আমি আমার চার ছেলে আর দুই মেয়ে। কিন্তু পাহাড়ের পথ ধরে পালিয়ে আসায় চার ছেলেকে হারিয়েছি। সেনারা আমার পাঁচ বছর ও ১০ বছর বয়সী ছেলেকে গুলি করে মেরেছে। বাকি দুই ছেলের একজনের বয়স দুই, আরেকজন ছিল তিন বছর বয়সী। ক্ষুধার যন্ত্রণায় ওরা মরে গেছে।

সুচির কানাডার নাগরিকত্ব বাতিল

টরেন্টো নিউজ জানায়, রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় এবং এই গণহত্যায় সমর্থনের দায়ে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচিকে দেয়া কানাডার সম্মানসূচক নাগরিকত্ব বাতিলের দাবি উঠছে দেশটির বিভিন্ন মহল থেকে। ইন্টারনেটে এ বিষয়ে একটি পিটিশন ক্যাম্পেইন চলছে, যেখানে পাঁচ দিনে প্রায় ৯ হাজার মানুষ সই করেছেন।

শনিবার টরেন্টোতে কয়েকটি সংগঠন আয়োজিত এমন এক সমাবেশে অংশ নেন খোদ কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড। রাখাইনে চলমান সেনা অভিযান সম্পর্কে ফ্রিল্যান্ড বলেন, মিয়ানমার সরকারের অভিযান মূলত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নির্মূল করার উদ্দেশ্যেই পরিচালিত হচ্ছে। কানাডার সরকার এ বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে।

সুচিকে ২০১২ সালে কানাডার সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেয়া হয়। কানাডার ১৫০ বছরের ইতিহাসে বিশ্বের মাত্র ছয়জনকে সম্মানসূচক এ নাগরিকত্ব দেয়া হয়েছে। কানাডার আইনে সাধারণ নাগরিক ও সম্মানসূচক নাগরিকদের মধ্যে কোনো পার্থক্য উল্লেখ করা হয়নি। অন্য দিকে দেশটির প্রচলিত আইনে কোনো নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা কানাডা বা কানাডার বাইরে সরাসরি বা অন্য কোনো উপায়ে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধে জড়িত হলে, কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রে ইন্ধন জোগালে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

Comments

Popular posts from this blog

Messi in harness as Argentina promise fireworks

সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর তড়িৎ বিশ্লেষণ

অধ্যায় - ৫ রাসায়নিক বন্ধন