মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর সে দেশের সেনাবাহিনী, পুলিশ, উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের হামলা-নির্যাতন-ধর্ষণ প্রতিদিনই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দৃষ্টি কাড়ছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বলছে, তারা ২৫ আগস্ট পুলিশ ও সেনাক্যাম্পে হামলার জন্য দায়ী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে এই ‘নির্মূল অভিযান’ চালাচ্ছে।
কিন্তু এর ফলে গোটা সীমান্ত এলাকাতেই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে এবং তার শিকার হয়ে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে। নিজ ভূমি থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা অভিযোগ করছে, সেনাবাহিনী তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা করছে এবং গোটা গ্রাম আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছে।
দেশহীন এই জনগোষ্ঠীকে ‘জাতিগত নিধনের’ জন্য হামলা-নির্যাতনের সব ধরনের আলামত আছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের নেতৃবৃন্দ। যদিও মিয়ানমারে সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর নির্যাতন-বঞ্চনার ইতিহাস খুব পুরোনো। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত দেশটির অধিকাংশ মানুষই মনে করে, এরা বিদেশি, বাংলাদেশ থেকে এসেছে। এবং তাদের ‘রোহিঙ্গা’ না বলে ‘বাঙালি’ হিসেবে অভিহিত করে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এর পেছনে ধর্মীয় ও নৃ-তাত্ত্বিক পার্থক্যের আলামত দেখলেও সময় যত যাচ্ছে ততই রোহিঙ্গাদের ‘জাতিগত নিধনের’ পেছনে অন্য কারণও তুলে আনছেন গবেষক, অনুসন্ধানী গণমাধ্যমকর্মী ও অ্যাক্টিভিস্টরা।
সম্প্রতি জোসেপ ফোরিনো, টমাস জনসন ও জেসন ভন মেডিং নামে তিনজন পণ্ডিত ‘দি অয়েল ইকোনমি অ্যান্ড ল্যান্ড-গ্রেভ পলিটিকস বিহাইন্ড মিয়ানমারস রোহিঙ্গা রিফিউজি ক্রাইসিস’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ কোয়ার্টজ সাময়িকীতে প্রকাশ করেন। জোসেপ ফোরিনো ও টমাস জনসন অস্ট্রেলিয়ার নিউ ক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষণারত। আর জেসন ভন মেডিং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক। তাদের নিবন্ধের ভাষান্তর করেছেন চন্দন সাহা রায়।
মিয়ানমারের সবচেয়ে দরিদ্র রাজ্য রাখাইনের রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সাম্প্রতিক সময়ে সহিংসতা বেড়েই চলেছে। নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে বাঁচার জন্য মানুষ স্রোতের মতো নিজ আবাসভূমি থেকে বিতাড়িত হচ্ছে- তারা পায়ে হেঁটে, ছোট ছোট নৌকায় করে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এটা বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাস্তুচ্যুতির ঘটনা। আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) নামে একটি সংগঠনের তৎপরতার মুখে এই ঘটনা ঘটছে।
মিয়ানমারের এই নিপীড়নমূলক ব্যবস্থার জন্য দেশটির ধর্মীয় ও নৃ-তাত্ত্বিক পার্থক্যকে সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে। এই প্রচার ব্যাপক মাত্রায় হচ্ছে। ফলে এখন এটা বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে পড়ছে যে, এই ‘খেলার’ পেছনে আরো অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে। এখানে বিশেষ করে উল্লেখ করে রাখা দরকার, মিয়ানমারে ১৩৫টি বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর জাতিসত্তার বসবাস রয়েছে। (যদিও ১৯৮২ সালে রোহিঙ্গারা দেশটির জাতিসত্তার তালিকা থেকে নিজেদের হারিয়ে ফেলে।)
সাম্প্রতিক সময়ে সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে অধিকাংশ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সেনাবাহিনী ও দেশটির গণতন্ত্রপন্থী নেতা অং সান সু চিই মনোযোগের কেন্দ্রে রয়েছেন। এই হামলা-নির্যাতনের পর থেকে যদিও সু চির শান্তিতে নোবেল পুরস্কার নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপকভাবে প্রশ্ন উঠেছে।
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর যে পরিকল্পিত নির্যাতন-নিপীড়ন চলছে, সু চি সেই অভিযোগকে প্রতিনিয়ত অস্বীকার করে যাচ্ছেন। যদিও গণমাধ্যম এখনো আশা করে যে, এই দুর্দশা নিরসনে শেষ পর্যন্ত সু চি বোধ হয় নিজের অবস্থানের পরিবর্তন করবেন।
কিন্তু দুর্দশার সব চিত্র এখনো পরিষ্কারভাবে প্রকাশ পায়নি। রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন, তাদেরকে একেবারে প্রান্তিক অবস্থানে ঠেলে দেওয়া এবং বাস্তুচ্যুতির ঘটনা কেন ঘটছে- এক্ষেত্রে ধর্মীয় এবং নৃ-তাত্ত্বিক পার্থক্যের বাইরে অন্য কোনো কারণ খুঁজে বের করাই যেন এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।
এখানে মিয়ানমারে ব্যাপকভাবে বাস্তুচ্যুতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্বার্থ ও অর্থনৈতিক লাভালাভের বিষয়টির ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হবে। আর এটা শুধু রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রেই না, মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠী কাচিন, সান, কারেন, চীন, মন সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
‘ভূমিদস্যুতা’
ভূমিদস্যুতা এবং ভূমি অধিগ্রহণ মিয়ানমারে ব্যাপকভাবেই আছে। এটা নতুন কোনো ঘটনা নয়। বিগত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে সামরিক জান্তা কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ ছাড়াই সারা দেশ থেকে ধর্মীয় ও নৃ-গোষ্ঠী নির্বিশেষে ছোট ছোট ভূমিমালিকদের জমি অধিগ্রহণ করে। ‘উন্নয়ন’ প্রকল্প, সেনানিবাস সম্প্রসারণ, প্রাকৃতিক সম্পদ উন্মুক্তকরণ, বৃহৎ কৃষি খামার, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও পর্যটনের নামে এসব জমি অধিগ্রহণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, সামরিক জান্তা তখন কাচিন রাজ্যে সোনার খনি খননের জন্য গ্রামবাসীর কাছ থেকে ৫০০ একরের বেশি জমি অধিগ্রহণ করে নেয়।
এসব ‘উন্নয়ন’ প্রকল্পের কারণে তখন হাজার হাজার মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়। অনেকে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশ, ভারত ।
কিন্তু এর ফলে গোটা সীমান্ত এলাকাতেই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে এবং তার শিকার হয়ে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে। নিজ ভূমি থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা অভিযোগ করছে, সেনাবাহিনী তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা করছে এবং গোটা গ্রাম আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছে।
দেশহীন এই জনগোষ্ঠীকে ‘জাতিগত নিধনের’ জন্য হামলা-নির্যাতনের সব ধরনের আলামত আছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের নেতৃবৃন্দ। যদিও মিয়ানমারে সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর নির্যাতন-বঞ্চনার ইতিহাস খুব পুরোনো। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত দেশটির অধিকাংশ মানুষই মনে করে, এরা বিদেশি, বাংলাদেশ থেকে এসেছে। এবং তাদের ‘রোহিঙ্গা’ না বলে ‘বাঙালি’ হিসেবে অভিহিত করে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এর পেছনে ধর্মীয় ও নৃ-তাত্ত্বিক পার্থক্যের আলামত দেখলেও সময় যত যাচ্ছে ততই রোহিঙ্গাদের ‘জাতিগত নিধনের’ পেছনে অন্য কারণও তুলে আনছেন গবেষক, অনুসন্ধানী গণমাধ্যমকর্মী ও অ্যাক্টিভিস্টরা।
সম্প্রতি জোসেপ ফোরিনো, টমাস জনসন ও জেসন ভন মেডিং নামে তিনজন পণ্ডিত ‘দি অয়েল ইকোনমি অ্যান্ড ল্যান্ড-গ্রেভ পলিটিকস বিহাইন্ড মিয়ানমারস রোহিঙ্গা রিফিউজি ক্রাইসিস’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ কোয়ার্টজ সাময়িকীতে প্রকাশ করেন। জোসেপ ফোরিনো ও টমাস জনসন অস্ট্রেলিয়ার নিউ ক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষণারত। আর জেসন ভন মেডিং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক। তাদের নিবন্ধের ভাষান্তর করেছেন চন্দন সাহা রায়।
মিয়ানমারের সবচেয়ে দরিদ্র রাজ্য রাখাইনের রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সাম্প্রতিক সময়ে সহিংসতা বেড়েই চলেছে। নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে বাঁচার জন্য মানুষ স্রোতের মতো নিজ আবাসভূমি থেকে বিতাড়িত হচ্ছে- তারা পায়ে হেঁটে, ছোট ছোট নৌকায় করে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এটা বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাস্তুচ্যুতির ঘটনা। আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) নামে একটি সংগঠনের তৎপরতার মুখে এই ঘটনা ঘটছে।
মিয়ানমারের এই নিপীড়নমূলক ব্যবস্থার জন্য দেশটির ধর্মীয় ও নৃ-তাত্ত্বিক পার্থক্যকে সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে। এই প্রচার ব্যাপক মাত্রায় হচ্ছে। ফলে এখন এটা বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে পড়ছে যে, এই ‘খেলার’ পেছনে আরো অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে। এখানে বিশেষ করে উল্লেখ করে রাখা দরকার, মিয়ানমারে ১৩৫টি বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর জাতিসত্তার বসবাস রয়েছে। (যদিও ১৯৮২ সালে রোহিঙ্গারা দেশটির জাতিসত্তার তালিকা থেকে নিজেদের হারিয়ে ফেলে।)
সাম্প্রতিক সময়ে সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে অধিকাংশ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সেনাবাহিনী ও দেশটির গণতন্ত্রপন্থী নেতা অং সান সু চিই মনোযোগের কেন্দ্রে রয়েছেন। এই হামলা-নির্যাতনের পর থেকে যদিও সু চির শান্তিতে নোবেল পুরস্কার নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপকভাবে প্রশ্ন উঠেছে।
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর যে পরিকল্পিত নির্যাতন-নিপীড়ন চলছে, সু চি সেই অভিযোগকে প্রতিনিয়ত অস্বীকার করে যাচ্ছেন। যদিও গণমাধ্যম এখনো আশা করে যে, এই দুর্দশা নিরসনে শেষ পর্যন্ত সু চি বোধ হয় নিজের অবস্থানের পরিবর্তন করবেন।
কিন্তু দুর্দশার সব চিত্র এখনো পরিষ্কারভাবে প্রকাশ পায়নি। রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন, তাদেরকে একেবারে প্রান্তিক অবস্থানে ঠেলে দেওয়া এবং বাস্তুচ্যুতির ঘটনা কেন ঘটছে- এক্ষেত্রে ধর্মীয় এবং নৃ-তাত্ত্বিক পার্থক্যের বাইরে অন্য কোনো কারণ খুঁজে বের করাই যেন এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।
এখানে মিয়ানমারে ব্যাপকভাবে বাস্তুচ্যুতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্বার্থ ও অর্থনৈতিক লাভালাভের বিষয়টির ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হবে। আর এটা শুধু রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রেই না, মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠী কাচিন, সান, কারেন, চীন, মন সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
‘ভূমিদস্যুতা’
ভূমিদস্যুতা এবং ভূমি অধিগ্রহণ মিয়ানমারে ব্যাপকভাবেই আছে। এটা নতুন কোনো ঘটনা নয়। বিগত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে সামরিক জান্তা কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ ছাড়াই সারা দেশ থেকে ধর্মীয় ও নৃ-গোষ্ঠী নির্বিশেষে ছোট ছোট ভূমিমালিকদের জমি অধিগ্রহণ করে। ‘উন্নয়ন’ প্রকল্প, সেনানিবাস সম্প্রসারণ, প্রাকৃতিক সম্পদ উন্মুক্তকরণ, বৃহৎ কৃষি খামার, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও পর্যটনের নামে এসব জমি অধিগ্রহণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, সামরিক জান্তা তখন কাচিন রাজ্যে সোনার খনি খননের জন্য গ্রামবাসীর কাছ থেকে ৫০০ একরের বেশি জমি অধিগ্রহণ করে নেয়।
এসব ‘উন্নয়ন’ প্রকল্পের কারণে তখন হাজার হাজার মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়। অনেকে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশ, ভারত ।
Comments
Post a Comment