ওয়ান স্টপ সার্ভিসের আওতায় ত্রাণ বিতরণের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে চায় সরকার।

কক্সবাজার থেকে: মিয়ানমারে সহিংসতার শিকার হয়ে উদ্বাস্তু হয়ে আসা রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা সেবা আরও জোরদার এবং সমন্বিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এজন্য দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগ দিচ্ছে সেনাবাহিনীর মেডিক্যাল টিমও।

ওয়ান স্টপ সার্ভিসের আওতায় ত্রাণ বিতরণের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে চায় সরকার।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে কক্সবাজারে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে আসা চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা.আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তে আমরা বসেছিলাম।  সেনাবাহিনীর মেডিক্যাল কোরের অফিসাররা ছিলেন।  স্বাস্থ্য বিভাগ এবং দেশি-বিদেশি এনজিওর প্রতিনিধিরাও ছিলেন।
‘সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিচ্ছিন্নভাবে যে যার যার মতো করে রোহিঙ্গাদের যেসব চিকিৎসা দিচ্ছে সেটা বন্ধ করা হবে। আর্মির মেডিক্যাল টিমের সঙ্গে আমরা সবাই মিলে সমন্বিতভাবে কাজ করব। ’
কক্সবাজার সদর হাসপাতাল, উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, এমএসএফ হাসপাতাল, আদ্-দ্বীন হাসপাতালে বড় পরিসরে রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আবার রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী বসতিসংলগ্ন এলাকায় উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধীনে ২১টি ক্যাম্প এবং টেকনাফের অধীনে ৬টি ক্যাম্প করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। দুই উপজেলায় ৮টি কমিউনিটি ক্লিনিকেও রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা চলছে।

এর বাইরে ব্র্যাক, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ ১৫টির মতো বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার পক্ষ থেকে একটি-দুটি ক্যাম্প খুলে চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি উদ্বাস্তূ রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ করা হচ্ছে।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা.শেখ আব্দুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, যেসব রোহিঙ্গা এসেছে তাদের মধ্যে কয়েক লাখ শিশু আছে। এদের প্রায় সবাই জ্বর, শ্বাসকষ্টের সমস্যা, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগে ভুগছে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। তবে এত শিশুর মধ্যে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ পৌঁছে দেওয়া, এটাও একটা দুরূহ কাজ।
উখিয়ার থাইংখালীতে আদ্-দ্বীন হাসপাতালের খোলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে কথা হয়েছে জ্বর নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা জয়তুনা বেগমের সঙ্গে।  মিয়ানমারের মংডু জেলার ছিলাদং থেকে আসা জয়তুনা বাংলানিউজকে বলেন, সাতদিন আগে এসেছি। চারদিন ধরে হেঁটে আসতে হয়েছে। আসার সময় থেকে গায়ে জ্বর। এখানে এসে কোথাও একজন ডাক্তারও পাইনি।  প্রথমবার এই হাসপাতালে এসে চিকিৎসা পেলাম।
উখিয়া ও টেকনাফের স্থায়ী-অস্থায়ী প্রতিটি কেন্দ্রে প্রতিদিন গড়ে আড়াই’শ রোহিঙ্গাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের বিনামূল্যে ওষুধও দেওয়া হচ্ছে। এরপরও দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় যারা বসত গড়ে তুলেছেন তারা থেকে যাচ্ছেন চিকিৎসা সেবার বাইরে। রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতে ঘুরলেচিকিৎসা না পাওয়ার এমন হাহাকার দেখা যাচ্ছে।
এই অবস্থায় সরকারের নির্দেশে শনিবার রাতে সেনাবাহিনীর মেডিক্যাল কোরের প্রধান কর্নেল ডা. মো.মামুনের সভাপতিত্বে জরুরি সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। 
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা.আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে আমরা কলেরাসহ বিভিন্ন টিকা দেব। প্রত্যেকটা ত্রাণকেন্দ্রকে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের আওতায় আনব। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে তো এত ম্যানপাওয়ার দেয়া সম্ভব না।  সেনাবাহিনী এক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা করবে।  আর দেশি-বিদেশি এনজিওগুলো নিজেদের ইচ্ছেমতো কাজ করতে পারবে না।  তাদেরও আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।
রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সামলাতে গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনীও। রোহিঙ্গাদের মধ্যে শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি ত্রাণ সংগ্রহ ও বিতরণে সমন্বয় করছে সেনাবাহিনী।
গত ২৪ আগস্ট রাতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বিভিন্ন সেনা ও পুলিশ চৌকিতে একযোগে হামলা চালায় রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা। এর জেরে মিয়ানমারে সহিংসতার ছড়িয়ে পড়লে উদ্বাস্তূ হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে। বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে।

Comments

Popular posts from this blog

Messi in harness as Argentina promise fireworks

সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর তড়িৎ বিশ্লেষণ

অধ্যায় - ৫ রাসায়নিক বন্ধন