বাংলাদেশের ভূমিকায় রোহিঙ্গা সঙ্কট এখন আন্তর্জাতিক ইস্যু: শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের ভূমিকার কারণেই মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সঙ্কট বিশ্ববাসীর মনোযোগ পেয়েছেন ।
জাতিসংঘ সফর শেষে ফেরার পর শনিবার ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।
এবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গা সঙ্কট অবসানের জন্য পাঁচ প্রস্তাব তুলে ধরেছেন শেখ হাসিনা। নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বিশ্বনেতাদের প্রশংসাও ভেসেছেন তিনি।
রোহিঙ্গা সঙ্কটে সাহসী সিদ্ধান্ত ও উদার মনের পরিচয় দেওয়ায় দেশে ফিরে সংবর্ধনায় সিক্ত হন শেখ হাসিনা।
বিমানবন্দরে রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি লেখক, শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী, ক্রীড়াবিদদের সংবর্ধনা নেন প্রধানমন্ত্রী। বাইরে পথে পথে দলের অগুনতি নেতা-কর্মী-সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন তাকে সংবর্ধনা দিতে।
নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীকে ‘বিপন্ন মানবতার বাতিঘর’ অভিহিত করেন।
শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে বলেন, জাতীয় কর্তব্য হিসেবে মিয়ানমারের এই মুসলিম জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
শরণার্থী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থা করায় বিষয়ে সরকারি উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “প্রয়োজন এক বেলা খাব, আরেক বেলা তাদের ভাগ করে দেব।”
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে গত ২৫ অগাস্ট সহিংসতা শুরুর পর সীমান্তে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। প্রথমে সীমান্ত খুলে না দিলেও তা সিদ্ধান্ত বদলানো হলে এক মাস ৫ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়।
প্রথমে দ্বিধাগ্রস্ত হওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়ে তা কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে বোন শেখ রেহানার ভূমিকার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।
“প্রথমে আমরা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলাম... খোঁজ নিয়ে দেখলাম যে অত্যাচার হয়েছে, মেয়েদের উপর অত্যাচার… তাদেরকে আশ্রয় দিতে হল। পৃথিবীকে বহু এরকম ঘটনা ঘটে। অনেকে দরজা বন্ধ করে রাখে।
“রেহানা বলল, ১৬ কোটি লোককে খাওয়াচ্ছো, আর ৫-৭ লাখ লোককে খাওয়াতে পারবে না? আমি সেখানে গেলাম, সবাইকে ডেকে বললাম, আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। এ মানুষগুলোকে আশ্রয় দেওয়া, খাওয়াতে হবে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা তাদের আশ্রয় না দিলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারত না।”
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “মানুষ মানুষের জন্য, বিপন্ন মানুষকে আশ্রয় দেওয়া মানুষের কর্তব্য।”
প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং বাংলাদেশের মানুষের রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের আত্মবিশ্বাস আছে বলেই আমরা এই চ্যালেঞ্জটা নিয়েছি।”
ভাসান চরে পুনর্বাসন
মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার আগে তাদের নোয়াখালীর ভাসানচরে পুনর্বাসনের কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
“এখন তারা যেভাবে আছে, সেভাবে থাকতে পারে না। আমি যাওয়ার আগেই নেভিকে টাকা দিয়ে গিয়েছিলাম। ভাসান চরে দুটি সাইক্লোন সেন্টার ও আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।“নোয়াখালীর লোকজন বলে ঠেঙ্গার চর, আর চিটাগাংয়ে বলে ভাসান চর। যেহেতু, এরা ভাসমান, তাই আমি বললাম, ভাসান চর নামটাই থাকুক।”
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টির সফলতার কথাও বলেন শেখ হাসিনা; যদিও বিএনপির দাবি, এক্ষেত্রে সরকারের কূটনীতি ব্যর্থ হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, “আন্তর্জাতিকভাবে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। তারা (রোহিঙ্গা) যেন স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করতে পারে, সে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
শরণার্থীদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের ঘোষণা এবং আলোচনার জন্য অং সান সু চির দপ্তরের মন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকে অগ্রগতি মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “মিয়ানমারের একজন এসেছে। এটা একটা বিশেষ দিক।”
উসকানিতে সংযত থাকায় ধন্যবাদ
রোহিঙ্গা সঙ্কটের মধ্যে মিয়ানমারের প্ররোচনায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের একেবারে প্রতিবেশী..একটা পর্যায়ে এমন একটা ভাব দেখালো.. আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ বেঁধেই যাবে।
“আমাদের সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড, পুলিশসহ সকলকে সতর্ক করলাম.. যেন কোনোমতেই কোনো রকম উসকানির কাছে তারা যেন বিভ্রান্ত না হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত আমি নির্দেশ না দিই
Comments
Post a Comment