কেন প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদা বাড়ানো উচিত

কেন প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদা বাড়ানো উচিত?
শিক্ষকতা একটি অত্যন্ত সম্মানজনক পেশা কিন্তু শুধু প্রাথমিক শিক্ষকদের বেলায় এই কথাটা প্রযোজ্য নয়।আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়,কলেজ ইত্যাদির শিক্ষকদের যে বেতন ও মর্যাদা দেওয়া হয় তার শতভাগের কয়ভাগ প্রাথমিক শিক্ষকরা পায়।অথচ এদের বেতন মর্যাদা পাওয়া উচিত সবার উপরে।আপনি যদি কোন জাতিকে ধ্বংস করতে চান তাহলে তার শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করুন।আর শিক্ষা ব্যবস্থা খুব সহজে ধ্বংস করতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করলেই কেল্লা ফতে।বাকি শিক্ষা ব্যবস্থা এমনিতে ধ্বংস হয়ে যাবে।কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণের ধাপ মাত্র।এখানে শিক্ষার্থীকে হাত ধরে তার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য কোন সাহায্য করা হয়না।শিক্ষার্থী নিজে নিজেই তার স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করে।অথচ প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষকরা শিশুদের হাত ধরে তাদের বুঝায় স্বপ্ন কি,স্বপ্ন কিভাবে দেখতে হয়,কিভাবে স্বপ্ন পূরণ করতে হয়।এখানেই শিশুরা শিখে নৈতিকতা,আদব,এবং ভালোবাসা।এখানে শিক্ষার্থী যে বিষয়গুলো শিক্ষা পায় সেগুলো তার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত কাজে লাগে।এ স্তরে কাউকে শিখানো যে কত কঠিন তা শুধু ঐ শিক্ষকরাই জানে।একটা ইতিহাস বলি আমাদের ইসলামের২য় খলিফা ওমর যখন কারো যোগ্যতার ফাইনাল পরীক্ষা নিতেন তখন কতগুলো শিশুর মধ্যে উনাকে ছেড়ে দিতেন এবং শিশুদের তিনি কিভাবে আয়ত্বে আনেন সেটার উপরই ঐ ব্যক্তির যোগ্যতা নির্ধারণ করতেন।একবার সব সাহাবী একজন ব্যক্তিকে গভর্নর করার জন্য ওমর(রাঃ) আনহুকে অনুরোধ করলেন।ওমর রাঃ তখন বললেন আমি তার যোগ্যতার পরীক্ষা নিবো।পরীক্ষার জন্য ঐ ব্যক্তিকে কিছু শিশুর মধ্যে ছেড়ে দিলেন এবং তাদের আয়ত্বে আনতে বললেন।কিছুক্ষণ পর দেখা গেল ঐ ব্যক্তি শিশুদের গোলমালে অতিষ্ঠ হয়ে কোন শিশুকে চড় দিয়ে,আবার কোন শিশুর কান ধরে বা প্রহার করে শিশুদের আয়ত্বে আনার চেষ্টা করতেছেন।ওমর রাঃ বললেন দেখ যে ব্যক্তি সামান্য শিশুদের গোলমালে রাগান্বিত হয়ে শিশুদের ভালবাসার এবং বুঝানোর মাধ্যমে আয়ত্বে আনতে পারেনা বরং প্রহারের মাধ্যমে আয়ত্বে আনার চেষ্টা করে সেই ব্যক্তি কিভাবে গভর্নর হয়ে এই শিশুদের বাবাদের আয়ত্বে 'আনবে।সুতরাং উনার গভর্নর হওয়ার কোন যোগ্যতা নেই।আসলে কে কত যোগ্য তাদের শিশুদের মধ্যে ছেড়ে দিলে বোঝা যায়।আর প্রাথমিক শিক্ষকরা তাদের ভালোবাসা দিয়ে শিশুদের আয়ত্বে এনে তাদের শিক্ষা দিয়ে তারা যে অন্য সবার চেয়ে বেশী যোগ্য তার প্রমাণ দিচ্ছেন।তারপরও তাদের বেতন ও মর্যাদা এত কম যে বলতেও লজ্জা হয়।অথচ একটি শিক্ষিত জাতি গঠন করার ক্ষেত্রে ৫০% এর চেয়েও বেশী অবদান রাখে প্রাথমিক শিক্ষকরা।বিশ্বব
িদ্যালয়,কলেজের শিক্ষকসহ রাষ্ট্রের প্রধান থেকে শুরু করে সরকারের সব কর্মকর্তা এবং কর্মচারীর শিক্ষক কিন্তু এই প্রাথমিক শিক্ষকরাই।তারপরও শিক্ষকদের বেতন মর্যাদা একজন ড্রাইভারের চেয়েও কম।কী মর্মান্তিক!একজন শিক্ষকও তো মানুষ।তারও কিছু চাওয়া- পাওয়ার অধিকার আছে।একজন শিক্ষককে যদি পেটে ক্ষুধা ও কম মর্যাদা দিয়ে শারীরিক এবং মানসিকভাবে পঙ্গু করে তার কাছে মানসম্মত শিক্ষার জন্য চেঁচামেচি করা হয় তাহলে তা পাগলামি ছাড়া আর কিছু নয়।উন্নত দেশে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদা অনেক বেশী তাই তাদের শিক্ষা ব্যবস্থাও অনেক উন্নত।বেতন ও মর্যাদার কারনে উন্নত দেশে উচ্চ মেধাবীরা প্রাথমিক শিক্ষক হচ্ছে খুব খুশি মনে আর আমাদের দেশে সরকার প্রাথমিক শিক্ষকদের এত বেতন ও মর্যাদা দিয়েছে যে মেধাবীরা এ পেশায় আসতে চায়না আর আসলেও পালানোর জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠে।সরকারের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতিও ত্রুটিপূর্ণ।এখানে একই বেতনে বিভিন্ন যোগ্যতার শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে সরকার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যাবস্থাকে জগাখিচুড়িতে পরিণত করেছে।সরকারের অনেক কর্মকর্তা এখনো মনে করে প্রাইমারীতে পড়ানোর জন্য এইচ,এস,সি পাশই যথেষ্ট।আসলে এই ধারনাটি কি ঠিক?বর্তমানে প্রাথমিকে যে সিলেবাস আছে তা অনেক উন্নত মানের।এই সিলেবাসটি যদি প্রাইমারীর কোন শিক্ষার্থী আয়ত্ব করতে পারে তাহলে উচ্চ শিক্ষা স্তরে ঐ শিক্ষার্থীকে কোথাও কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবেনা।তাই শিক্ষার্থী এবং প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নের জন্য নিন্মের ৪টি বিষয় অবশ্যই দ্রুত কার্যকর করা উচিত।
(১)প্রাথমিকের সহকারি শিক্ষক নিয়োগে নারী-পুরষ সবার জন্য সর্বনিন্ম যোগ্যতা স্নাতক পাশ এবং পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ হওয়া উচিত।
(২) সহকারি শিক্ষকদের এগারো এবং প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড প্রদান।
(৩)সরাসরি নিয়োগ বন্ধ করে শুধু সহকারি শিক্ষকদের বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি প্রদান।
(৪)প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে সকল প্রকার কোটা বিলুপ্তকরণ।

Comments

Popular posts from this blog

সুখবর হচ্ছে বাংলাদেশই তৈরি হচ্ছে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক অ্যাভিগান

অধ্যায় - ৫ রাসায়নিক বন্ধন