আশুরার আমলের ফজিলত

আরবি মাসের প্রথম মাস মহরম । ইহা ফজিলতের মাস ।ইসলামী ইতিহাস ও ঐতিহ্যের মাস। সুখের মাস ও শোকের মাস। আনন্দ ও বেদনার মাস। হাসি ও কান্নার মাস। স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙের খেয়া। সুসংবাদ ও দুঃসংবাদের সারথি। হক ও বাতিলের পার্থক্যকারী। মানুষ ও অমানুষের পরিচয়দানকারী।
রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে ইসলামে আশুরার দিনে রোজা রাখার বিধান ছিল।
মুসা (আ.) ও তাঁর অনুসারীরা রোজা রাখতেন। জাহেলি যুগে মানুষ উপবাস থাকত। নবী (সা.) ও তাঁর সহচররা এ দিনে সিয়াম সাধনা করতেন। দ্বিতীয় হিজরিতে রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর আশুরার রোজা মানুষের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘জাহেলি যুগে কোরাইশরা আশুরার রোজা রাখত। রাসুল (সা.)ও তা পালন করতেন। মদিনায় হিজরতের পরও পালন করেছেন এবং লোকদের পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু যখন রমজান মাসের রোজা ফরজ হয়, তখন তিনি ইরশাদ করেন, যার মন চায় রোজা রাখো, যার মন চায় পরিত্যাগ করো। ’ (বুখারি, হাদিস : ১৮৭৬)

ইহুদি ও নাসারারা আশুরার দিনে রোজা রাখে। এদিন তাদের কাছেও তাৎপর্যময়। তারাও আশুরার প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করে। রাসুল (সা.) বিষয়টি জানতে পেরে সাহাবাদের বলেছেন, তোমরা ইহুদি-নাসারাদের সাদৃশ্য বর্জন করো এবং তিনি আশুরার আগে বা পরের সঙ্গে মিলিয়ে সিয়াম পালন করার নির্দেশ দেন। এ জন্য মুসলমানদের করণীয় হলো, আশুরার রোজার সঙ্গে আগে বা পরের এক দিন মিলিয়ে রোজা রাখা। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা আশুরার দিন রোজা রাখো এবং ইহুদিদের সাদৃশ্য বর্জন করো। তোমরা আশুরার সঙ্গে তার আগে এক দিন বা পরে এক দিন সিয়াম পালন করো। ’ (শরহে সহিহ ইবনে খুজায়মা, হাদিস : ২০৯৫)
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘একবার লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসুল! ইহুদি ও নাসারারা ১০ মহররম দিনটিকে সম্মান করে। তখন রাসুল (সা.) বলেন, আগামী বছর বেঁচে থাকলে আমরা ৯ মহররমসহ রোজা রাখব। ’ বর্ণনাকারী বলেন, ‘পরের বছর মহররম আসার আগে তাঁর ওফাত হয়ে যায়। ’ (মুসলিম, হাদিস : ১১৩১, আবু দাউদ, হাদিস : ২৪৩৭)
রমজানের রোজার পরেই আশুরার রোজার স্থান। তার মর্যাদা ফরজ রোজার পরেই। আশুরার রোজা উত্তম রোজা। সম্মানের সিয়াম। ইতিহাসসম্পর্কিত সিয়াম। তাৎপর্যসংবলিত সিয়াম। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘রমজানের পরে সর্বোত্তম সিয়াম হলো মহররম মাসের সিয়াম—অর্থাৎ আশুরার সিয়াম। আর ফরজ সালাতের পরে সর্বোত্তম সালাত হলো রাতের নফল সালাত—অর্থাৎ তাহাজ্জুদের সালাত। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৪২১)
আশুরার রোজা পালনে বান্দার আমলের খাতা ভরে যায় পুণ্যে। প্রশান্তি আসে অস্থির মনে। কাফ্ফারা হয়ে যায় যাপিত বছরের গুনাহের। এক দিনের উপবাসে মানবজীবন হয় গুনাহ মাফে পাপমুক্ত ও মালিকের দয়ার বারিধারায় সিক্ত। কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি আশা করি, আশুরার সিয়াম আল্লাহর কাছে বান্দার বিগত এক বছরের (সগিরা) গুনাহের কাফ্ফারা হিসেবে গণ্য হবে। ’ (মুসলিম, হাদিস : ২০৪৪)

Comments

Popular posts from this blog

সুখবর হচ্ছে বাংলাদেশই তৈরি হচ্ছে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক অ্যাভিগান

অধ্যায় - ৫ রাসায়নিক বন্ধন