মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনমানের উন্নয়নে যা যা প্রয়োজন, তার সবই করার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনমানের উন্নয়নে যা যা প্রয়োজন, তার সবই করার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সোমবার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজ বাংলাদেশকে যে গড়ে তুলতে পারছি, বাঙালি জাতি হিসেবে বিশ্বে যে সন্মান আমরা পাচ্ছি; এখানে আপনাদের বিরাট অবদান রয়েছে। আপনাদের মহান আত্মত্যাগের মাধ্যমে আজ দেশ স্বাধীন হয়েছে।
“কাজেই আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের কল্যাণার্থে যা যা করনীয় আমি তা করে যাব।”
ঢাকা সেনানিবাসের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে এই অনুষ্ঠানে খেতাবপ্রাপ্ত ৭০ জন মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
এরমধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর ২০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে পরিচয়পত্র দেয়া হয়; যা ব্যবহার করে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সুবিধা ভোগ করতে পারবেন তারা।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমি জানি আপনজন হারানোর বেদনা কত কষ্টের। সেই বেদনা বুকে নিয়েও দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা আপনজন হারিয়েছেন বা পঙ্গু হয়ে আছেন বা যারা অবদান রেখেছেন, তাদেরকে সবসময় সন্মানিত হিসেবে গণ্য করি এবং তাদের কল্যাণে কাজ করে যাওয়া কর্তব্য হিসেবে মনে করি।”
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা সম্মিলিতভাবে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণের সূচনা করে। প্রতি বছর দিনটি ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ হিসেবে পালন করে বাংলাদেশ।
শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অভূতপূর্ব অবদান কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব। এ জন্য মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের ব্যাপারে আমাদের সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।”
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর থেকেই বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্যও সব রকম চেষ্টা চলছে।
বর্তমান সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচির কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছি, যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। দেশকে আরও উন্নত করার জন্য নানা ধরনের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।”
বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, “আমাদের যতটুকু সম্পদ আছে তা যথাযথভাবে কাজে লাগালে অবশ্যই আমরা সন্মানের সাথে আমাদের দেশকে গড়ে তুলতে পারব।”
প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কর্মসূচির কথাও অনুষ্ঠানে বলেন। যে বিদেশি বন্ধুরা মুক্তিযুদ্ধের সময় বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছেন তাদের সন্মানিত করার উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন।
তিনি জানান, প্রতি জেলা ও ৪২২টি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ৪৩টি জেলা ও ১৬১টি উপজেলায় কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ শেষ হয়েছে।
এসব কমপ্লেক্সে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন তথ্য ও প্রদর্শনী থাকবে। মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে সমবেত হতে পারবেন।
“এগুলোর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জাতি জানতে পারবে। ইতিহাস বিকৃতি করতে কেউ সাহস পাবে না।”
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আগে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
প্রধানমন্ত্রী ঢাকা সেনানিবাসে পৌঁছলে তাকে স্বাগত জানান তিন বাহিনীর প্রধান ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিভিণ্ন ক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, “আমাদের স্বাধীনতা রক্ষার সুমহান দায়িত্ব সশস্ত্র বাহিনীর উপর ন্যস্ত। এ পবিত্র দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আমাদের দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা, দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম, অবকাঠামো নির্মাণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।”
সরকার সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন, ভৌত ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও বিবিধ কল্যাণমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নে ‘বদ্ধপরিকর’ বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ২০১৫-২০১৬ সালের ভূমিকার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর পাঁচজনকে ‘শান্তিকালীন সেনা’, ‘বাহিনী পদক’ ও ‘অসামান্য সেবা পদক’ দেন।
Welcome
ReplyDelete